ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া: আধুনিক ও ইসলামী শিক্ষার সমন্বিত প্রতিষ্ঠান…

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), কুষ্টিয়া, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে একটি সুপরিচিত নাম। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ইসলামী শিক্ষা ও আধুনিক বিদ্যার সমন্বয়ে শিক্ষাদান করে আসছে। কুষ্টিয়াঝিনাইদহ জেলার সীমানায় অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা:

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ইসলামী শিক্ষার উচ্চতর প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়া জেলার শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়টি গাজীপুরে স্থানান্তরিত হলেও পরবর্তীতে কুষ্টিয়ায় পুনঃস্থাপন করা হয়।

অবস্থানক্যাম্পাস:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার সীমানায় অবস্থিত। প্রায় ১৭৫ একর জমির উপর বিস্তৃত এই ক্যাম্পাসে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, যেমন লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, আবাসিক হল, মসজিদ এবং খেলার মাঠ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা অবস্থিত, যা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার অধীনে।

একাডেমিক তথ্য:

বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি  বিভাগ রয়েছে। এখানে ধর্মতত্ত্বইসলামী শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রকৌশলপ্রযুক্তি, ব্যবসা প্রশাসন, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিককলা অনুষদীয় বিষয়ের উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

(ই বি) ক্যাম্পাসের অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (IU), কুষ্টিয়া, শুধুমাত্র ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র নয়, এটি একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ছাত্রদের জন্য উন্নতমানের অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো:

১. একাডেমিক ভবন ও গবেষণা কেন্দ্র

  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ রয়েছে, প্রতিটির জন্য রয়েছে আলাদা একাডেমিক ভবন।
  • আধুনিক শ্রেণিকক্ষ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণা সুবিধা রয়েছে।
  • গবেষণা কার্যক্রমের জন্য বিশেষায়িত ল্যাব এবং গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

২. লাইব্রেরি ও তথ্যকেন্দ্র

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে দুই লক্ষাধিক বই এবং ডিজিটাল রিসোর্স
  • শিক্ষার্থীরা অনলাইন জার্নাল, ই-বুক ও গবেষণা প্রবন্ধে সহজেই প্রবেশাধিকার পায়।
  • লাইব্রেরিটি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড এবং ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য শান্ত পরিবেশ প্রদান করে।

৩. আবাসিক হল ও হোস্টেল ব্যবস্থা

  • ছাত্রদের জন্য ৫টি পুরুষ হল এবং ছাত্রীদের জন্য ৪টি মহিলা হল রয়েছে।
  • প্রতিটি হলে রয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ওয়াই-ফাই সংযোগ, ক্যান্টিন, স্টাডি রুম ও বিনোদনের ব্যবস্থা।
  • আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য গরম পানির ব্যবস্থা, সাধারণ ক্যান্টিন এবং বিনোদন কক্ষও রয়েছে।

৪. স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাকেন্দ্র

  • বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি আধুনিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত মেডিকেল চেকআপের সুবিধা দেওয়া হয়।
  • শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও প্রাথমিক ঔষধ প্রদান করা হয়।
  • জরুরি মুহূর্তে নিকটবর্তী হাসপাতালের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

৫. ক্যাফেটেরিয়া ও খাদ্য ব্যবস্থা

  • ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে যেখানে স্বাস্থ্যকর ও মানসম্মত খাবার সরবরাহ করা হয়।
  • আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং সুবিধা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে।

৬. ক্রীড়া ও বিনোদন সুবিধা

  • ক্যাম্পাসে রয়েছে বড় খেলার মাঠ, যেখানে ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলার সুযোগ রয়েছে।
  • একটি আধুনিক জিমনেসিয়াম রয়েছে, যা ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্যসচেতন হতে সাহায্য করে।
  • বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়।

৭. মসজিদ ও ধর্মীয় কার্যক্রম

  • ক্যাম্পাসে একটি বড় জামে মসজিদ রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নামাজ আদায় করতে পারে।
  • ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিশেষায়িত বিভাগে ধর্মীয় আলোচনাসভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

*কিভাবে যাবেন ইবি?

  • ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার বাসে উঠে সহজেই ক্যাম্পাসের সামনে নেমে পড়তে পারেন।
  • এছাড়া ট্রেন ও বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে কুষ্টিয়া হয়ে ইবি আসতে পারেন।

 

* ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, কেবলমাত্র ইসলামী শিক্ষা নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণায়ও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। উন্নত অবকাঠামো, গবেষণা সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, খেলাধুলার ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় ও গুণগত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করছে।

এটি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

Share this content: