ষাট গম্বুজ মসজিদে ভ্রমণ

ষাট গম্বুজ মসজিদে ভ্রমণ

বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ষাট গম্বুজ মসজিদ। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ারও অন্যতম বৃহৎ প্রাচীন মসজিদ। খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত এই মসজিদটি ১৫শ শতাব্দীতে নির্মিত হয় এবং বর্তমানে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত।


ইতিহাসের পাতায় ষাট গম্বুজ মসজিদ

ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন তৎকালীন বিখ্যাত সুফি সাধক ও সেনাপতি খান জাহান আলী। তিনি ১৪৫৯ সালের দিকে এই মসজিদটি তৈরি করেন। যদিও নাম ষাট গম্বুজ, তবে আসলে মসজিদটিতে ৭৭টি গম্বুজ রয়েছে, যার মধ্যে ৬০টি ছোট গম্বুজ এবং বাকি ১৭টি প্রধান গম্বুজ ও কারুকার্যময় নকশা দিয়ে তৈরি।

খান জাহান আলী ছিলেন বাংলার একজন শাসক ও ইসলামের প্রচারক। তিনি সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলে বেশ কিছু স্থাপত্য ও জনবসতি গড়ে তোলেন। ষাট গম্বুজ মসজিদ ছিল তাঁর তৈরি করা অন্যতম স্থাপনা, যা মুগল স্থাপত্যশৈলীর প্রভাব বহন করে।


স্থাপত্যশৈলী: মুসলিম ও বাংলা সংস্কৃতির মিশ্রণ

ষাট গম্বুজ মসজিদ তৈরি হয়েছে ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে, যা তখনকার সময়ে খুবই উন্নত নির্মাণশৈলীর পরিচয় বহন করে। মসজিদটি আয়তাকার (১৬০ ফুট × ১০৮ ফুট) এবং চারকোণে চারটি বড় মিনার রয়েছে, যা প্রতিরক্ষা বুরুজ হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য:

  • ৭৭টি গম্বুজ: ষাট গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত হওয়া সত্বেও এ মসজিদে গম্বুজ আছে মোট ৭৭ টি।
  • ১০টি দরজা: মসজিদের সামনে ও পাশে রয়েছে ১০ টি  বড় আকৃতির দরজা, যা বাতাস চলাচলের জন্য তৈরি।
  • বহুস্তম্ভ বিশিষ্ট হল: মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ রয়েছে, যা তৎকালীন স্থাপত্যের  অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

মিহরাব ও খোদাই করা দেয়াল: দেয়ালের উপর সুন্দর  করে খোদাই করা অলংকরণ ও মিহরাব রয়েছে, যা চমৎকার শৈল্পিক কাজের নিদর্শন বহন করে চলছে।

কোথায় অবস্থিত?

ষাট গম্বুজ মসজিদ অবস্থিত বাগেরহাট জেলা শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে

কীভাবে পৌঁছাবেন?

*ঢাকা থেকে বাস/ট্রেন: আপনি ঢাকার গাবতলী বা সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি খুলনা বা বাগেরহাটগামী বাসে যেতে পারেন।
*খুলনা থেকে: খুলনা শহর থেকে সরাসরি লোকাল বাস,   প্রাইভেট কার বা  সিএনজিতে মাত্র ৩০-৪৫ মিনিটে মসজিদে পৌঁছানো যায়।
*নৌপথ: যারা একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতা চান, তারা চাইলে  লঞ্চে  করে খুলনা হয়ে বাগেরহাট যেতে পারেন।

প্রবেশ মূল্য ও সময়সূচি:

* মসজিদ পরিদর্শন ফ্রি, তবে পার্শ্ববর্তী জাদুঘরে প্রবেশের জন্য সামান্য ফি দিতে হয়।
* সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
*নামাজের সময় মসজিদে দর্শনার্থীদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।


কেন ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখবেন?

*ঐতিহাসিক নিদর্শন: প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো মসজিদটি বাংলার সুলতানি আমলের অন্যতম সেরা স্থাপত্যকীর্তি।
*বিশ্ব ঐতিহ্য: ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
*অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী: মসজিদটির গম্বুজ, খোদাই করা দেয়াল, স্তম্ভ ও মিনার নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর।
*শান্তিপূর্ণ পরিবেশ: নিরিবিলি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রশান্তিময় পরিবেশ উপভোগের জন্য এটি দারুণ স্থান।

ষাট গম্বুজ মসজিদ, শুধু একটি প্রাচীন স্থাপনা নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। বাংলাদেশে ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে অবশ্যই এই মসজিদটি তালিকায় রাখা উচিত। অতীতের সেই দুর্দান্ত স্থাপত্যশৈলী ও ইসলামী ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহনকারী এই মসজিদ একবার ঘুরে দেখলেই মনে বিশাল প্রভাব তৈরি করে।

#ষাট গম্বুজ মসজিদ

#ষাট গম্বুজ মসজিদে ভ্রমণ

#বাংলাদেশের প্রচীন মসজিদ

#ভ্রমণের জন্য মসজিদ

Share this content: