বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ঢাকা

বায়তুল মোকাররম মসজিদ,ঢাকা : বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ…

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বায়তুল মোকাররম মসজিদ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থপনা নয় , এটি দেশের ধর্মীয়, ঐতিহ্যবাহী এবং স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। ১৯৬০-এর দশকে নির্মিত এই মসজিদটি তার অনন্য গঠনশৈলী, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত।

*মসজিদের ইতিহাস ও নির্মাণ:

বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৯৬০ সালে এবং এটি সম্পূর্ণরূপে নির্মিত হয় ১৯৬৮ সালে। মসজিদের নকশা প্রণয়ন করেন বিখ্যাত স্থপতি আব্দুল হুসেইন থারওয়ানি মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা শরিফের অনুকরণে এর স্থাপত্য পরিকল্পনা করা হয়, যা মসজিদটিকে অন্যান্য প্রচলিত মসজিদ থেকে আলাদা করেছে।

*স্থাপত্যশৈলী ও বৈশিষ্ট্য:

বায়তুল মোকাররম মসজিদের স্থাপত্যশৈলী অন্যান্য মসজিদের তুলনায় অনেকটাই ব্যতিক্রম। সাধারণত গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ দেখা গেলেও, বায়তুল মোকাররমের মূল ভবনে কোনো গম্বুজ নেই, বরং এটি কাবার আদলে একটি আয়তাকার ব্লকের মতো তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়ে উঁচু ছাদ, প্রশস্ত খোলা স্থান এবং মার্বেল পাথরে সাজানো ফ্লোর।

মসজিদের মূল প্রাঙ্গণটি তিনটি স্তরে বিভক্ত:

  • ভূ-তল (নিচতলা): এখানে বাণিজ্যিক দোকান ও অফিস রয়েছে।
  • মধ্যতলা: এটি মূলত একটি খোলা প্রাঙ্গণ, যেখানে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারেন।
  • উচ্চতলা: এটি মূল নামাজের স্থান, যেখানে বিশাল মুসল্লি সমাগম ঘটে।

মসজিদের প্রবেশপথে রয়েছে নয়নাভিরাম বাগানফোয়ারা, যা এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

*মসজিদের ধারণক্ষমতা:

প্রতিদিন লক্ষাধিক মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেন, বিশেষ করে জুমা, ঈদ এবং রমজানের সময় এখানে বিপুল মুসল্লির সমাগম ঘটে। ধারণা করা হয়, মসজিদটির ভেতরে একসঙ্গে প্রায় ৪০,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। সম্প্রতি, মসজিদের সম্প্রসারণ কাজ চলছে, যা শেষ হলে আরও অধিকসংখ্যক মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

*ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:

বায়তুল মোকাররম শুধু একটি মসজিদ নয়, এটি বাংলাদেশের ইসলামিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এখানে নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত, ইসলামিক আলোচনা সভা এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

বিশেষত রমজান মাসে, এখানে সেহরি, ইফতার এবং তারাবির নামাজের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আসেন। এছাড়া ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ এখানে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করেন।

*কেন দেখবেন বায়তুল মোকাররম মসজিদ?

যদি আপনি ঢাকা ভ্রমণ করেন, তাহলে বায়তুল মোকাররম মসজিদ অবশ্যই দেখার মতো একটি জায়গা। আপনি এখানে এসে দেখতে পারবেন—

  • পবিত্র কাবা শরিফের অনুকরণে নির্মিত একটি ভিন্নধর্মী স্থাপত্য।
  • দেশের বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি মসজিদ।
  • ইসলামের চেতনায় নির্মিত এক অনন্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

পরিশেষে

বায়তুল মোকাররম মসজিদ শুধু নামাজ আদায়ের জায়গা নয়, এটি বাংলাদেশের ইসলামি ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক। মুসলমানদের জন্য এটি এক পবিত্র স্থান, আর পর্যটকদের জন্য এটি এক বিস্ময়কর স্থাপত্য। আপনি যদি ঢাকায় যান, তাহলে অবশ্যই এই  সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদটি ঘুরে দেখতে ভুলবেন না!

Share this content: