দেশের বাইরে ভ্রমণ প্রস্তুতি

দেশের বাইরে ভ্রমণ প্রস্তুতি ও খুঁটিনাটি পরামর্শ…
বিদেশ ভ্রমণ মানেই শুধু ঘুরে বেড়ানো নয়।এটা এক নতুন জগতের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ। তবে এ যাত্রা শুরু করার আগে রয়েছে কিছু জরুরি ধাপ, যেগুলোর সঠিক প্রস্তুতি না থাকলে মধুর ভ্রমণ রূপ নিতে পারে দুঃস্বপ্নে। তাই জেনে নিন, বিদেশ সফরের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য, প্রস্তুতি ও টিপস।
১. পাসপোর্ট, যাত্রার প্রথম সঙ্গী:
একটি বৈধ পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশ যাত্রা অসম্ভব।
- নতুন আবেদন: অনলাইনে www.passport.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
- নতুন আবেদনকারীদের জন্য প্রয়োজন:
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- জন্মনিবন্ধন সনদ
- ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট
- নবায়ন করতে হলে: মেয়াদ শেষের ৬ মাস আগে আবেদন করাই উত্তম।
টিপস: ট্রাভেল প্ল্যানের আগে পাসপোর্টের মেয়াদ চেক করে নিন—কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে।
২. ভিসা, দেশের অনুমতি:
প্রতিটি দেশের ভিসা নীতিমালা আলাদা।
- কিছু দেশের ভিসা সহজ (Visa on Arrival):
যেমন :মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ইত্যাদি। - অন্যান্য দেশের জন্য আবেদন করতে হয়:
যেমন: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, শেঙ্গেন দেশসমূহ। - ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সাধারণত ৬ মাস)
- চাকরির প্রমাণ/ব্যবসার লাইসেন্স
- ইনভাইটেশন লেটার (যদি প্রযোজ্য)
- রিটার্ন টিকিট ও হোটেল বুকিং
- ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স (বাধ্যতামূলক অনেক দেশে)
টিপস: দূতাবাস বা কনস্যুলেটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম ও ডকুমেন্টস লিস্ট যাচাই করুন। এজেন্টের উপর পুরোপুরি নির্ভর না করাই ভালো।
৩. বিমানের টিকিট, সময় ও দামের ভারসাম্য:
- বুকিংয়ের সেরা সময়: ভিসা পাওয়ার পরপরই বুকিং করলে ভালো।
- কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইট: Skyscanner, Google Flights, Expedia
- টিপস:
- রিটার্ন টিকিট নিলে অনেক দেশে ভিসা পাওয়া সহজ হয়।
- ট্রানজিট ফ্লাইটে সময় বেশি লাগলেও অনেক সাশ্রয়ী।
৪. হোটেল/আবাসনের বুকিং:
- সাইটগুলো: Booking.com, Agoda, Airbnb
- বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:
- লোকেশন (সেন্ট্রাল হলে ভালো)
- নিরাপত্তা ও রিভিউ
- ওয়াই-ফাই, ব্রেকফাস্ট, ফ্রি ক্যানসেলেশন ইত্যাদি
- বিকল্প: যদি কোনো আত্মীয় বা বন্ধু থাকে, তার ঠিকানাও ভিসা আবেদন ও থাকার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে (ইনভাইটেশন লেটার লাগতে পারে)।
৫. ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স, নিরাপদ যাত্রার সঙ্গী:
বিদেশে সামান্য স্বাস্থ্য সমস্যা বা দুর্ঘটনা থেকেও বড় খরচ হতে পারে।
- কেন প্রয়োজন?
- চিকিৎসা ব্যয় কাভার করে
- মালপত্র হারানো বা ফ্লাইট বাতিলে ক্ষতিপূরণ
- জরুরি দেশে ফেরার ব্যবস্থা
- কোথায় পাওয়া যায়:
- বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (MetLife, Green Delta ইত্যাদি)
- অনলাইনেও পাওয়া যায় – SafetyWing, World Nomads
৬. আর্থিক প্রস্তুতি:
- ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করুন:
- অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জ থেকে টাকা পরিবর্তন করুন
- সীমা: বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ১ বছরে সর্বোচ্চ $১২,০০০ (ব্যক্তিভিত্তিক)
- কার্ড:
- আন্তর্জাতিক ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন
- কার্ড চালু আছে কিনা ব্যাংকে নিশ্চিত করুন
- ডিজিটাল ওয়ালেট:
- কিছু দেশে Revolut, Wise, Apple Pay ইত্যাদি জনপ্রিয়
৭. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও তাদের কপি:
সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রিন্ট কপি এবং সফট কপি (Google Drive/Email/USB) রাখা উচিত।
যেমন:
- পাসপোর্ট
- ভিসা
- টিকিট
- হোটেল বুকিং
- ইন্স্যুরেন্স
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- ইনভাইটেশন লেটার (যদি থাকে)
৮. দরকারি অ্যাপস ডাউনলোড করুন:
- ভ্রমণের জন্য সহায়ক অ্যাপস:
- Google Maps: রাস্তাঘাট ও লোকেশন চেনার জন্য
- Google Translate: ভাষাগত সাহায্যের জন্য
- XE Currency: মুদ্রা রেট চেকের জন্য
- Uber/Bolt/Grab: লোকাল যাতায়াতের জন্য
- TripIt: ট্রিপ প্ল্যানার
৯. স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন:
- ভ্রমণের আগে একটি সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ভালো
- কিছু দেশে ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক—Yellow Fever, COVID-19 ইত্যাদি
- নিজের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রেসক্রিপশন সঙ্গে নিন
১০. কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ:
- বিদ্যুৎ প্লাগ অ্যাডাপ্টার: আপনার গন্তব্য দেশের বৈদ্যুতিক সকেট সিস্টেম ভিন্ন হতে পারে
- ব্যাগ গোছানো: শুধু দরকারি জিনিস নিন, অতিরিক্ত বোঝা ঝামেলার কারণ
- জরুরি যোগাযোগ নম্বর লিখে রাখুন
- মোবাইলে রোমিং বা ইন্টারন্যাশনাল প্যাক চালু করুন
- একটু ভাষা শিখুন:“Hello”, “Thank you”, “How much?” – এইরকম কিছু শব্দ
শেষ কথা
বিদেশ ভ্রমণ যেমন আনন্দের, তেমনই কিছুটা জটিল। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা আর সতর্ক প্রস্তুতি আপনাকে এই ভ্রমণে করবে আত্মবিশ্বাসী, নিরাপদ ও উপভোগ্য। নিজের লক্ষ্য স্থির রাখুন, প্রস্তুতি নিন, তারপর বেরিয়ে পড়ুন এক অন্যরকম অভিযানে।
Share this content: