চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার

চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার: শত বছরের পুরানো…
রমজান মাস আসলেই ঢাকার চকবাজার পরিণত হয় এক বিশাল ইফতার বাজারে। শতবর্ষ ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্যবাহী ইফতার মেলা শুধু ঢাকাবাসীর নয়, সারা দেশের মানুষের কাছেও বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। পুরান ঢাকার এই বাজারের ইফতার আইটেমগুলোর স্বাদ, ইতিহাস, ও বৈচিত্র্যের জন্য এটি আলাদা মর্যাদা পেয়েছে।
*চকবাজারের ইফতার ঐতিহ্য:
চকবাজারের ইফতার বিক্রির ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো। মোগল আমল থেকেই এই বাজারে নানা ধরনের ইফতার সামগ্রী বিক্রি হয়। সময়ের পরিক্রমায় এটি একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, যেখানে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রান্নার সাথে আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটেছে।
*জনপ্রিয় ইফতার আইটেমসমূহ:
চকবাজারের ইফতারের মূল আকর্ষণ হলো এখানকার ব্যতিক্রমী ও ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো। এখানে পাওয়া যায় এমন কিছু জনপ্রিয় আইটেমের তালিকা নিচে দেওয়া হলো—
১. বড় বাপের পোলায় খায়:
এই মজাদার খাবারটির নাম শুনলেই বোঝা যায় এটি বেশ ব্যতিক্রমী। এটি এক ধরণের বিশেষ কাবাব, যা খাসির মাংস, ডিম, চিজ ও বিভিন্ন মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হয়।
২. শাহী জিলাপি:
এই জিলাপির আকৃতি সাধারণ জিলাপির তুলনায় অনেক বড়, এবং এটি বেশ মুচমুচে ও সুস্বাদু। গরম গরম এই জিলাপি ইফতারের সময় বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
৩. নানান রকমের কাবাব:
চকবাজারের আরেকটি বড় আকর্ষণ হলো বিভিন্ন ধরনের কাবাব। মাটন কাবাব, চিকেন কাবাব, বীফ শিক কাবাব, মালাই বটি কাবাব সহ বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু কাবাব এখানে পাওয়া যায়।
৪. মোগলাই পরোটা:
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই মোগলাই পরোটা মাংস ও ডিমের পুর ভরে তৈরি করা হয়, যা খেতে দারুণ সুস্বাদু।
৫. চিকেন ও বিফ রোস্ট:
ইফতারে বিশেষভাবে জনপ্রিয় একটি আইটেম হলো চিকেন ও বিফ রোস্ট। এটি মসলাদার গ্রেভির সাথে পরিবেশন করা হয়, যা নানরুটি বা পরোটার সঙ্গে খেতে দারুণ লাগে।
৬. ডালপুরি ও বেগুনি:
বাংলাদেশি ইফতারের অন্যতম প্রধান উপাদান ডালপুরি ও বেগুনি। চকবাজারে এগুলো বড় আকারে এবং বিশেষ স্বাদের মিশ্রণে তৈরি হয়।
৭. ফলের বিশেষ শরবত:
চকবাজারের ইফতার বাজারে নানা ধরনের ফলের স্পেশাল শরবত, সালাদ বা ককটেল পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু।
*কেন চকবাজারের ইফতার এত জনপ্রিয়?
- ঐতিহ্য ও স্বাদ: শতবর্ষের পুরনো রেসিপিগুলোর কারণে এই ইফতারের স্বাদ অনন্য।
- বৈচিত্র্য: বিভিন্ন ধরনের খাবার একই জায়গায় পাওয়া যায়।
- ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ: পুরান ঢাকার প্রাণবন্ত পরিবেশ ইফতার বাজারকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
- বিশেষ রান্নার ধরণ: এখানকার খাবারগুলো বিশেষভাবে মশলা ও স্বাদের কারণে আলাদা মাত্রা পেয়েছে।
*চকবাজারে ইফতার কেনার পরামর্শ:
- ইফতার বাজারে যাওয়ার সময় ভিড় এড়ানোর জন্য বিকেলের আগেই পৌঁছানো ভালো।
- স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন খাবার কেনার জন্য বিশ্বস্ত দোকানগুলোর থেকে কেনাকাটা করুন।
- অল্প পরিমাণে বিভিন্ন খাবার নিয়ে স্বাদ গ্রহণ করুন, যাতে বৈচিত্র্য উপভোগ করতে পারেন।
শেষ কথা
চকবাজারের ইফতার শুধু খাবার নয়, এটি এক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অংশ। বছরের পর বছর ধরে এটি রমজান মাসের বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। ঢাকায় থাকলে বা সুযোগ পেলে একবার হলেও এই ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজারের স্বাদ গ্রহণ করা উচিত।
আপনার চকবাজার ইফতার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কেমন? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!
Share this content: