আহসান মঞ্জিল: ঢাকার এক অনন্য স্থাপনা

আহসান মঞ্জিল: ঢাকার এক অনন্য স্থাপনা…
ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে আহসান মঞ্জিল অন্যতম স্থাপনা। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই রাজকীয় প্রাসাদটি কেবল স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন নয়, বরং এটি মোগল ও ব্রিটিশ শাসনামলের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আহসান মঞ্জিল ছিলো নবাবদের আবাসস্থল ও পদচারণায় মুখোর, যা এখন বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত।
আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস:
আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস ১৮৫৯ সালে শুরু হয়, যখন ঢাকার নবাব খাজা আবদুল গণি এটি নির্মাণ শুরু করেন এবং ১৮৭২ সালে এর কাজ সম্পন্ন হয়। প্রাসাদটির নামকরণ করা হয় তার ছেলে খাজা আহসানউল্লাহ-এর নামে। এটি নবাব পরিবারের বাসভবন ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ব্রিটিশ শাসনামলে এটি ঢাকার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা, নীতি-নির্ধারণ এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সমাগম এখানে ঘটত। ১৯৫২ সালের পর এটি ধীরে ধীরে অবহেলার শিকার হয়, তবে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার এটি অধিগ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে জাদুঘর হিসেবে পুনঃসংস্কার করে।
স্থাপত্যশৈলী ও নকশা:
আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী মুগল ও ইউরোপিয়ান ডিজাইনের সংমিশ্রণে গঠিত। এটি মূলত দুটি অংশে বিভক্ত—আন্দার মহল (অভ্যন্তরীণ অংশ) এবং রংমহল (বাইরের অংশ)। প্রাসাদটির প্রধান ভবনটি গোলাপি রঙের হওয়ায় একে “পিঙ্ক প্যালেস” নামেও ডাকা হয়।
*বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থাপত্য উপাদানসমূহ:
- বিশাল গম্বুজ, যা দূর থেকে দৃশ্যমান
- ইউরোপিয়ান ধাঁচের বিশাল করিডোর ও বারান্দা
- দৃষ্টিনন্দন খোদাই করা কাঠ ও কাচের জানালা
- বুড়িগঙ্গার তীরে উঁচু ভিত্তির ওপর নির্মিত রাজকীয় সিঁড়ি
আহসান মঞ্জিল জাদুঘর:
বর্তমানে এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অধীনে পরিচালিত হয়। এখানে নবাব পরিবারের ব্যবহৃত আসবাবপত্র, পোশাক, তৈজসপত্র, অস্ত্রশস্ত্র ও নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে। জাদুঘরের প্রতিটি কক্ষে ঢাকার নবাব পরিবারের জীবনের ছোঁয়া পাওয়া যায়।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে সহজেই আহসান মঞ্জিলে যাওয়া যায়। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কাছে এটি অবস্থিত। গুলিস্তান বা সদরঘাট থেকে রিকশা কিংবা সিএনজি নিয়ে সহজেই পৌঁছানো যায়।
সময়সূচি ও টিকিট মূল্য:
- শনিবার থেকে বুধবার: সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা
- শুক্রবার: বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা
- বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ,
- প্রবেশমূল্য: স্থানীয়দের ও বিদেশিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন।
আহসান মঞ্জিলে ঘোরার অভিজ্ঞতা:
যদি আপনি ইতিহাস ও ঐতিহ্য পছন্দ করেন, তবে আহসান মঞ্জিল আপনার জন্য আদর্শ স্থান। এখানকার প্রতিটি দেয়াল, আসবাবপত্র এবং স্থাপত্য ইতিহাসের একেকটি গল্প বলে। বুড়িগঙ্গার তীর থেকে সূর্যাস্ত দেখা, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার খাওয়া—সব মিলিয়ে এটি হতে পারে এক চমৎকার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।
আপনার ঢাকার ভ্রমণ তালিকায় আহসান মঞ্জিলকে অবশ্যই রাখুন!
আহসান মঞ্জিল শুধু একটি ভবন নয়, এটি ঢাকার নবাব পরিবারের ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী। এই প্রাসাদ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ঢাকার সমৃদ্ধ অতীত এবং এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা। একদিন সময় বের করে ঘুরে আসুন, ইতিহাসের ছোঁয়া অনুভব করতে পারেন।
#আহসান মঞ্জিল
#আহসান মঞ্জিল কেনো যাবো
#পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান
#ঘুরে আসুন আহসান মঞ্জিল
Share this content: